দেশজুড়ে

ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যা, শঙ্কা আর বিচারহীনতার দশ বছর

ডেস্ক রিপোর্ট

১৪ নভেম্বর ২০২৩ , ৬:২৭:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা ও শাহ মখদুম হলের সভাপতি খলিলুর রহমান মামুন হত্যাকান্ডের দশ বছর আজ। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর স্থানীয় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ডোমেরহাট বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে ধারালো ছুরি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দূর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই মারা যান মামুন।

নিহত খলিলুর রহমান মামুন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের ডোমেরহাট গ্রামের মো. খায়রুজ্জামান সরকারের ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোকলোর বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর নিজ এলাকা রামজীবন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।

ছাত্রলীগের এ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই-নিরস্ত্র) পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। চাকরিতে যোগ দিতে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু বিধিবাম! প্রশিক্ষণে যাওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে দূর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ছাত্রলীগের এই নেতা।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় উচ্চ আদালতের বিচার কার্য স্থগিতাদেশ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। আসামি পক্ষের করা উচ্চ আদালতের রিট পিটিশন দায়ের করার প্রেক্ষিতে মামলার চার্জ শুনানি স্থগিতাদেশ দেন। ফলে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিচার কার্য শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। এ হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আজও বিচার পায়নি স্বজনরা।

হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ভাই খালেদ রেজা বাবুল। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে এজহার নামীয় ২২ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এরপর চার্জ গঠনের শুনানির জন্য মামলাটি প্রক্রিয়াধীন ছিলো। ইতোমধ্যে এ মামলার দুজন আসামি মারা গেছেন। কিন্তু দশ বছর পেরিয়ে গেলেও এই মামলার বিচার কার্য শুরু হয়নি। ফলে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন মামলার আসামিরা।

নিহত মামুনের পরিবার জানান, দীর্ঘ দশ বছরেও তারা হত্যাকাণ্ডের বিচার পাননি। উল্টো মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আসামিরা। এতে শঙ্কা আর ভয় নিয়ে এখনো বিচার পাওয়ার আশায় স্বজনরা। চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচার কার্য শেষ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে পরিবার।

অন্যদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারকার্য স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন তিন আসামি। তাদের রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতের রিভিশন পেন্ডিং আদেশ দেন বিচারক। ফলে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশের কারণে মামলাটির যাবতীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে, আসামিদের করা রিট পিটিশনের বিরুদ্ধে আপিল করেন মামলার বাদি খালেদ রেজা। কিন্তু ২০১৯ সালে করা সেই আপিল শুনানি না হওয়ায় এখনো কোন আদেশ দেননি উচ্চ আদালত। এতে সকল বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা সফরে আসেন। ওই বছরের ২৫ জানুয়ারী গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে নিহত মামুনের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। নিহত মামুনের বাবা-মাকে ডেকে সান্ত্বনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়াও চলতি বছরের ৫ জুন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নিহত ছাত্রলীগ নেতা মামুনের পরিবার সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচার শেষ করার আশ্বাস দেন৷

মামলার বাদী ও নিহত মামুনের বড় ভাই মো. খালেদ রেজা বাবুল বলেন, ‘আমার ভাই বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালেও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। তখন এলাকায় কেউ ছাত্রলীগ করার সাহস পেতোনা। ২০০৯ সালের শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবির মুক্ত করার আন্দোলনে সামন থেকে নেতৃত্ব দেন আমার ভাই। ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষে সে একবার গুরুতর আহতও হয়েছিলেন। তখন থেকেই সে টার্গেটে সবার পরিণত হন। আর সেই কারনে আমার ভাইকে জীবন দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তারপরও আমি ভাই হত্যার বিচার এখনো পাইনি।’

নিহত মামুনের ছোট ভাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক খালিদ উর রহমান বাদল বলেন, আমার ভাইকে নৃশংসভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা দশ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এতদিনেও বিচার হয়নি। একজন ছাত্রলীগ নেতাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। কিন্তু সরকার ক্ষমতায় থাকতেও বিচার পাবো না এটা দুঃখজনক।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এই নেতা আরও বলেন, মামলাটি দ্রুত ত্বরান্বিত করতে আমার বাবা-মাসহ গত ৫ জুন গণভবনে গিয়ে মাননীয় প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি দ্রুত সময়ে মামলার বিচারকার্য শেষ করার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গাইবান্ধা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ প্রিন্স বলেন, ‘মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে হাইকোর্টে রিভিশন পেন্ডিং আছে। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টের স্টে অর্ডারের কারনে চার্জ হেয়ারিং শুনানি বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের রিভিশন কেস নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতের বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছেনা।’

আরও খবর

Sponsered content