আন্তর্জাতিক

নির্বাচন নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: কখন, কীভাবে প্রয়োগ হয়?

ডেস্ক রিপোর্ট

৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৫:৫৮:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। নির্বাচন নিয়ে ভোট উৎসব যেমন হচ্ছে, নির্বাচনে উত্তেজনা যেমন রয়েছে, তেমনই আছে নানা শঙ্কা এবং উদ্বেগ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কীভাবে দেখে, তারা কীভাবে এই নির্বাচনকে বিচার-বিশ্লেষণ মূল্যায়ন করে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ হয় এবং পর্যবেক্ষণের পরে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি দেশে নির্বাচন নিয়ে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে। এ সমস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, গুয়েতেমালা সহ আরও কয়েকটি দেশ। আর এই সমস্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো সবগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে নির্বাচনের পরে। উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন কেন্দ্রীক নিষেধাজ্ঞা কখনোই নির্বাচনের আগে প্রয়োগ করে না। কাজেই বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী, ভূমিকা কী হবে বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে কী চোখে দেখছে তা স্পষ্ট হবে ৭ জানুয়ারির পর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে গত দু বছর ধরেই কথা বলছে। দু বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তাদের আগ্রহের কথা বাংলাদেশ সরকার এবং অংশীজনকে বলে আসছে। এরকম একটি বাস্তবতায় আগামী ৭ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী- এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তা হল তারা সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এটি বাংলাদেশের জনগণও চায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে একজন কূটনীতিক বিশ্লেষক বলছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বিক নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর নজর রাখছে এবং এই নজর রাখার প্রেক্ষাপটে আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে তাদের অবস্থান তারা ব্যাখ্যা করতে করবে। কম্বোডিয়ার নির্বাচনের ঘটনাটিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ করেছিল। সেখানে প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনের আগে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকজন ব্যক্তি, কম্বোডিয়ার নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অবশ্য কম্বোডিয়ার ওপর আগে থেকেই অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছিলো। এখন দেখার বিষয় যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি?

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কাজেই কম্বোডিয়া যেভাবে বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়েছে আইন করে, বাংলাদেশের ঘটনাটি তেমন নয়। বরং বাংলাদেশের বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কম্বোডিয়ার ঘটনা এবং বাংলাদেশের ঘটনা এক রকম নয় বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। অবশ্য এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রশ্ন রয়েছে। যেমন- বিএনপি এবং তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা এবং বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের বিরুদ্ধে দণ্ড কার্যকর করা ইত্যাদি তাদেরকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা কি না সেই প্রশ্নটি আসতে পারে। মার্কিন নীতি নির্ধারক মহল বা থিঙ্ক ট্যাঙ্করা সেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করে তাদের সিদ্ধান্ত জানতে পারেন আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে।

দ্বিতীয়ত, কম্বোডিয়া যে ঘটনাটি দেখা গেছে তা হল নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলেছে, নির্বাচন কমিশন কম্বোডিয়া সরকারের অনুগত হিসাবে নির্বাচনে কাজ করেছে। যার ফলে তাদের ওই নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আর এই পুরো কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান এবং ওই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে বলেই দৃশ্যমান হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন তার অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করেছে। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশ যে কম্বোডিয়ার ঘরে পড়বে না সেটা অনেকেই মনে করেন। এছাড়াও যে দেশটির ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, সেটি হলো নাইজেরিয়া। নাইজেরিয়াতেও নির্বাচনে কারচুপি শঙ্কায় আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল কিছু ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ওপর। নির্বাচন পরে আরও কিছু নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মূলত এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ছিল ভিসা নিষেধাজ্ঞা।

অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানেও অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল জোর করে নির্বাচনে জয়ী হতে চায় এমন অভিযোগও আনা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এবং নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের নির্বাচনে সে রকম পরিস্থিতি নেই। এই নির্বাচনে কারো মধ্যে এতটুকু সন্দেহ নেই যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে যাচ্ছে। এই জন্য তাদের কারচুপি করতে হবে না। কিন্তু নির্বাচন যে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না ইত্যাদি বিষয়গুলোর দায় দায়িত্ব দেখি এবং ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি কেউ করে কিনা সে সমস্ত বিষয় দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে কিনা সেটা তাদের কূটনীতিক সিন্ধান্তের বিষয়। এছাড়াও অন্যান্য দেশগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছিল সেগুলো সবই নির্বাচনের পরে। কাজেই বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি করবে তা বোঝা যাবে ৭ জানুয়ারির পর।

আরও খবর

Sponsered content