দেশজুড়ে

নয় বছরের রেকর্ড ভাঙল ঢাকার তাপমাত্রা

ডেস্ক রিপোর্ট

১৫ এপ্রিল ২০২৩ , ১২:০৮:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

তীব্র দাবদাহে রাজধানীর জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে।

ঢাকায় দীর্ঘ নয় বছরের তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সেই রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এদিন সারা দেশে সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘খুলনা বিভাগসহ ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও পটুয়াখালীতে টানা তীব্র দাবদাহ ও দেশের অন্যান্য জেলায় মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। প্রথমে কয়েকটি জেলায় মৃদু তাপপ্রবাহ ছিল। পরে মৃদুর পাশাপাশি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে কয়েকটি জেলায়। ঢাকায় ২০১৪ সালের পর আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। নয় বছর আগে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি। আজ সেটি ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ৩৬-৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮-৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রিকে মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রিকে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া সহকারী মো. ফরমান আলী জানান, শনিবার খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগে সর্বনিম্ন ছিল ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি। একই দিন দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ফেনীতে ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরেই চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে।  

তিনি জানান, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুর জেলায় ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ২৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বান্দরবানে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন ফেনীতে ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

ফরমান আলী জানান, সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৫ ও সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। রাজশাহী বিভাগের পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন নওগাঁর বদলগাছীতে ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ২১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

তিনি জানান, বরিশালের খেপুপাড়ায় ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন বরিশাল ও ভোলায় ২৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহে ৩৬ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস ও নেত্রকোণায় সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বর্তমানের এই দাবদাহ শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। সরাসরি প্রভাব হচ্ছে বৃদ্ধ লোকদের বেশি হিটস্ট্রোক হতে পারে। অনেকে মারাও যেতে পারে। অর্থাৎ খুব মারাত্মক।’

করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বব্যাপীই আবহাওয়া ইস্যু দাঁড়িয়ে গেছে। ঘাম হওয়ার কারণে পানির পিপাসা কম হলেও হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। সূর্যের সরাসরি আলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’

শ্রমিকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রিকশাওয়ালা বা রাস্তাঘাটের শ্রমিক, কৃষি শ্রমিকরা টানা পরিশ্রম না করে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে কাজ করবে। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাইরে কাজ করতে হলে মাথায় কিছু একটা রেখে ঢেকে দিতে হবে। শরীর কিছুক্ষণ পর পর মুছে দিতে হবে।’

শিশুদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শিশুদের ঘরের বাইরে কম বের করতে হবে। গ্রামের শিশুদের বাড়ির ওঠানের গাছপালার ছায়ায় রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করাতে হবে। এ ছাড়া রোজাদাররা ইফতারের পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করবে।’

আরও খবর

Sponsered content